27 C
Kolkata
27 C
Kolkata
শনিবার, মার্চ 25, 2023

অপ্রত্যাশিত সময় – বাংলা গল্প – সুজিত বাগচী

দিনটি লক্ষ্মী পুজোর দিন । প্রায় কুড়ি বছর পর নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাল্যকালের বন্ধু শ্যামলের বাড়িতে
মা-লক্ষ্মীর ভোগ খাওয়ার উপলক্ষে দেখা করতে গিয়েছিলাম । বুঝতেই পারছেন, বাঙ্গালির বাক্যালাপে কোন সময়সীমা বাঁধা থাকে  না । ওর বাড়ি থেকে বের হতে রাত্তির আটটা বেজে গেল। ওখানে রাত্তির আটটার পর অটো পাওয়া বরই কঠিন । এদিকে দুই কিলোমিটার পর রেলওয়ে স্টেশন । অগত্যা হাঁটতে শুরু করলাম ।
কিছু পথ অতিক্রম করার পর, আশ্বিনের ভাসা মেঘে হটাত ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হল । এদিক ওদিক চাইতে গিয়ে দেখতে পেলাম রাস্তার উপরে সারি দিয়ে কয়েকখানি টালির চালের ঘর । উঠে পরলাম একটি ঘরের বারান্দায় । ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এল একটি অল্প বয়েসি মেয়ে ।
“এ বাবু লাজ লাগে বুঝি ? ভিতরে আয়” ।
বলে আমার হাত ধরে এক হ্যাঁচকা মেরে ঘরে ঢুকিয়ে নিলো । ঘরের মধ্যে একটি চৌকি ছাড়া আর সেরকম কিছুই নেই । চৌকিতে পাতা একটা মোটা কাঁথা ও দুটি বালিশ । আলো বলতে একটা লম্ফ । মেয়েটি দরজার ছিটকিনি আটকে আবার নিজের মনে বলতে লাগলো “দুশো টাকা লিয়ে ছাড়বো কিন্তু এই বলে দিলাম হ্যাঁ “। ভাষা শুনে মনে হল মেয়েটি হিন্দুস্থানি হবে ।
হটাত দরজায় ঘা ” এই চামেলী পার্টি এনেছি” ।
” আরে শয়তানের বাচ্চা দরজা বন্ধ দেখে বুঝে লিতে পারিস না ঘরে পার্টি আছে” । এতক্ষণে আমার বোধগম্য হল যে আমি এক নিষিদ্ধপল্লির ঘরে বসে আছি । লম্ফর আলোয় মেয়েটির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পারছি না ।মেয়েটি আমার পাশে বসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল ” দুশো দিবি কি বল “? তবে খুলতে শুরু করি” । বলে লম্ফটা নিভিয়ে দিলো ।

আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে স্বজোরে মেয়েটির গালে একটি চর মেরে
বসলাম । মেয়েটিও রেগে গিয়ে “শুয়োর কা বাচ্চা বেশ্যা পাড়ায় এসে বেশ্যার গায়ে হাত । আজ তোরে কুচি কুচি করে কেটি ফেলি দিব “। বলে লম্ফটা জালিয়ে চৌকির নিচ থেকে বঁটি বের করে আমাকে মারতে উদ্যত
হল ।
আমিও চিৎকার করে বলতে লাগলাম “আমাকে দেখে কি তোর মনে হয়, এই পঞ্চান্ন বছর বয়েসে আমি কামসূত্রে আসক্ত । আমি না জেনে বৃষ্টির জন্য তোর বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি ।
আবার বাইরে থেকে আওয়াজ এল – “কি হয়েছে রে চামেলী” ?
চামেলী বঁটিটা নামিয়ে রেখে চিৎকার করে ” কি হয়েছে সেটা কি তুকে জমা খরচ দিবো ? ভাগ শালা ভাগ ” । বলে চৌকির পাশে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে । আমি চৌকি থেকে উঠে গিয়ে
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম ” দেখ আমি তোর বাবার মতন , আমাকে তুই ভুল বুঝিস না । মাথাটা হটাত যেন কেমন গরম হয়ে গেল । আমাকে তুই ক্ষমা করে দে মা । তোর বয়সী আমার একটা মেয়ে গত বছর ডেঙ্গুতে
মারা গেছে “।


“তোর মা বাবা কোথায় ” ?
কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো চামেলী ” মোদের মা-বাপের ঠিক থাইকলে কি আর কোঠিতে আসি বসতাম” ।

আবার দরজায় ঘা “এই দরজা খোলো পুলিশ” । চামেলী দরজা খুলতেই একটা সিপাই আমার জামার কলারটা ধরে “চল শালা এই বয়সে বেশ্যা পাড়ায় আসা “? চামেলী ছুটে এসে সিপাইটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে “ছোড়, ছোড় বলছি , এটা মোর পিতাজি আছে , এটা পার্টি না আছে, ছোড় ” । সিপাই হাসতে হাসতে “তোর আবার বাবা’? বলে অন্য ঘরে চলে গেল ।

সেই মুহূর্তে আমি যেন আমার মৃত সন্ধ্যার মুখটা ওর মধ্যে দেখতে পেলাম ।
“এ বাবু এটা গন্দ জাগা আছে । জলদি এখান থেকে চলে যা “।
আমি পকেট থেকে দুশ টাকা বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম “চামেলী এটা তুই মিষ্টি খেয়ে নিস , আমার মেয়ে না মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতো ” । বলে ঘরের বাইরে যেতে যাব “বাবু তোর পায়ে একবার গড় করতে পারি ?
বাড়ি গিয়ে না হয় পা টা ধুয়ে লিবি ” । আমি ওর কপালে একটা চুম্বন করে আবার পথে হাঁটতে শুরু করতে যাব বিদ্যুৎ এর আলোয় দেখলাম বারান্দার বাঁশের খুঁটি ধরে চামেলী করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে মুখে মৃদু হাসি ।
ঠিক আমার সন্ধ্যা এমন ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকত বারান্দায় আমার অফিস যাওয়ার সময় পথের দিকে চেয়ে ।

- Advertisement -spot_img

Latest news

- Advertisement -spot_img

Related news

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.