হাতে গোনা মাত্র ক’দিন, আসছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজো। পুজো মানেই আনন্দ ,উৎসব ,নতুন জামা ,খাওয়া-দাওয়া ,আড্ডা প্যান্ডেল হপিং আরো কত কিছু। এই আকালেও ঘরে থাকতে মন চায় না। পুজোতে অনেকেই বাইরে ঘুরতে চলে যান বা covid এর ভয়ে ভিড় এড়ানোর জন্য বাড়ির বাইরে পাও রাখতে চান না। একাদ বেলা কি দু-একদিন গাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন বাংলার গ্রামে কিংবা জেলায়, দেখে আসতে পারেন গ্রাম বাংলা কিংবা জেলার শারদ উৎসব।
এবারের পূজোর দিনক্ষণঃ-
৬ অক্টোবর ২০২১ (১৯ আশ্বিন ১৪২৮) – মহালয়া
১২ অক্টোবর ২০২১ (১৯ আশ্বিন ১৪২৮) – মহাসপ্তমী
১৩ অক্টোবর ২০২১ (১৯ আশ্বিন ১৪২৮) – মহাষ্টমী
১৪ অক্টোবর ২০২১ (১৯ আশ্বিন ১৪২৮) – মহানবমী
১৫ অক্টোবর ২০২১ (১৯ আশ্বিন ১৪২৮) – বিজয়া দশমী
বর্ধমানের ঘোষাল বাড়ির পুজো
বর্ধমানের কোলসাড়া ঘোষাল বাড়ির পুজোর বয়স প্রায় ৪০০ বছর।কথিত আছে ,স্বপ্নাদেশেই ঘোষাল পরিবারে শুরু হয় দুর্গাপুজো। এখানে ন দিন ধরে দুর্গাপুজো পালিত হয়। একচালার প্রতিমাতে শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ। দশমীর দিন কুমারী পূজা করা হয়, প্রতিপদ থেকে ভোগ অন্ন তৈরি করা হয়।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজো
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই জাঁকজমক সহকারে দুর্গাপুজো চালু হয় রাজবাড়ীতে। কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের পুজো বেশ প্রাচীন। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ী দুর্গা প্রতিমার নাম রাজরাজেশ্বরী, দেবীর অঙ্গে থাকে যোদ্ধার সাজ, বর্ম পরিহিতা দেবী। দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ মানে ঘোড়ামুখো সিংহ। এক সময় এখানে তোপধ্বনির সঙ্গে সন্ধিপুজো করা হত আর ১০৮ পশু বলির প্রথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই দুই প্রথাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সারাবছর রাজবাড়ীর সাধারণের জন্য বন্ধ থাকলেও পুজোর কটা দিন সাধারণের জন্য খোলা থাকে।
বক্সী বাড়ির পুজো
বীরভূম আর বর্ধমানের সীমান্তে আউশ গ্রাম থানার দেবশালা গ্রামের বক্সী বাড়ির মুন্ড পুজোর খ্যাতি বহুদিনের। সেই জমিদার বাড়ি আর নেই, কিন্তু রয়ে গেছে পূজোর দালান আর পুজো। এটি একটি পারিবারিক পুজো হলেও গোটা গ্রাম এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে। শোনা যায় দেবীদুর্গা তৎকালীন জমিদার কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে পুজোর কথা বলেন, সেই মুহূর্তে জমিদারদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। দেবী আবার স্বপ্নাদেশ দেন এবং তাদের সামর্থ্য অনুসারে পুজো করতে বলেন; মায়ের নির্দেশ অনুসারে প্রতিমার মুখাবয়ব ঘরে পূজো করা হয়।বক্সী পরিবারে আজও মুখাবয়ব পূজার প্রচলন হয়ে আসছে। গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবার পুজোর বিভিন্ন রকম দায়িত্বে থাকেন।
আসানসোলের ধাদকা গ্রামের পুজো
পুজোর বয়স ৩০০ বছর। পুজোর প্রতিমা একচালার, শাল কাঠের একটি পাটাতনের ওপর এই প্রতিমা তৈরি করা হয়। পুজো ঘিরে উৎসবের ছোঁয়া লাগে ধাদকা গ্রামে। পুজোর চার দিন নিরামিষ খাওয়া হয় এবং দশমীর পরদিন আমিষ খাবার প্রচলন আছে।
বালুরঘাটের সাহা বাড়ির পুজো
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্যতম বনেদি বাড়ি সাহা বাড়ি। ১৭৭ বছরের পুরনো এই পুজো। এখানে গেলে দেখতে পাবেন দেবী দুর্গার বাঁদিকে গণেশ আর ডানদিকে থাকেন কার্তিক, মহালয়ার দিন মায়ের চক্ষুদান করা হয় ও প্রতিমা রঙের কাজ শেষ করতে হয়। এই পুজো অন্নভোগ রান্না হয় না, দশমীর দিন দই আর খই দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। পুজোর চার দিন নিরামিষ খাওয়া দাওয়া হয়।
বেলুড় মঠের দুর্গাপুজো
১৯০১ সালে বেলুড়মঠে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সারদা মাকে ১০৮টি পদ্ম দিয়ে আলাদা করে জ্যান্ত দুর্গার পুজো করেছিলেন স্বামীজি। বেলুড়ে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু করেছিলেন উনি নিজেই। ষষ্ঠী থেকে সব দিনই দুর্গার পুজো হয় এবং ভোগ নিবেদন করা হয়। সপ্তমী ,অষ্টমী এবং নবমীতে দেবীকে মাছ নিবেদন করা হয়। চার পাঁচ রকমের মাছ থাকে। দশমীর রাতে হয় নিরঞ্জন, মুখে মিষ্টি দেবার সাথে সাথে পান থেঁতো করে মুখে ধরার রেওয়াজ রয়েছে, এছাড়াও দশ হাতে বোটাশুদ্ধ পান আর মিষ্টি দেওয়া হয়। বেলুড় রাসবাড়ীকে কেন্দ্র করে ওখানে আরো দুটো পুজো খুবই বিখ্যাত। ৪০০ বছরের পুরনো বালির মুখার্জী বাড়ির পুজো আর চৈতল পাড়ায় বীরেশ্বর চ্যাটার্জি স্ট্রিটে আয়োজিত বুড়িমার দুর্গোৎসব।