আর দূরে নয়। আতঙ্ক এবার ঘরের ভিতর। কালো ছত্রাকের ছোবলে প্রথম মৃত্যুর সাক্ষী হল কলকাতা। শুক্রবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা যান হরিদেবপুরের শম্পা চক্রবর্তী (৩২)। করোনা রোগীদের শরীরেই দেখা যাচ্ছে এই ছত্রাকের (Black Fungus) সংক্রমণ। চিকিৎসা পরিভাষায় যার আরেক নাম মিউকরমাইকোসিস। তিনি করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের (মিউকরমাইকোসিস) শিকার ছিলেন। তাঁকে নিয়ে রাজ্যে মোট পাঁচ জন দুরারোগ্য এই সংক্রমণে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন।
ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তুনু পাঁজার কথায়, শরীর দুর্বল হলে মূলত বাসা বাধে এই ছত্রাক। করোনা রোগীরা বেশিদিন আইসিইউ-তে থাকলে, কিংবা তাঁদের উপরে স্টেরয়েডের ব্যবহার বেশি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এমন ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঢুকে পড়ে শরীরে। যেমনটা হয়েছিল শম্পা দেবীরও। এতদিন রাজস্থান, মুম্বাই, তেলেঙ্গানা থেকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের খবর আসছিল। এই কৃষ্ণ ছত্রাকের দ্বারা সবথেকে বেশি সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসছে মহারাষ্ট্রে। ইতিমধ্যেই সেখানে আক্রান্ত প্রায় ১৫০০ মানুষ। করোনার মতোই এই রোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজস্থানেও। রাজস্থান ও তেলঙ্গানা সরকার ইতিমধ্যেই মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেও ক্রমাগত থাবা চওড়া করে চলেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। অবস্থা দেখে সব রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেয়, মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী আইনের আওতায় এনে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করা হোক। এর মধ্যে গত ১৩ মে রাজ্যে চার জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তবে তাঁরা ভিন রাজ্যের (বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিসগড়) বাসিন্দা ছিলেন, বাংলায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।
শম্পাদেবীর মৃত্যুতে চিন্তিত চিকিৎসকরা। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল সূত্রে খবর, হরিদেবপুরের শম্পাই ছিলেন রাজ্যের প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত। তাঁকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন চিকিৎসকরা। করোনা আক্রান্ত ওই মহিলা অনিয়ন্ত্রিত ব্লাডসুগার ও মিউকরমাইকোসিস নিয়ে শম্ভুনাথে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অচৈতন্য ওই রোগিণীকে প্রতি মিনিটে প্রায় ১২ লিটার অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। আচমকাই একদিন দেখা যায় শম্পাদেবীর নাকের উপরে কালো ছোপ। সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। পরীক্ষা করতেই ধরা পরে সত্যিটা। শম্পাদেবীর সাইনাস, মস্তিষ্ক ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। তড়িঘড়ি শুরু করা হয় মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার ভোরের দিকে মারা যান তিনি। তাঁর সাইনাস, চোয়াল, চোখ ও মস্তিষ্ক ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে।
এদিন স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকে মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জোর দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের পাশাপাশি বৈঠকে ছিলেন জনস্বাস্থ্য শাখার আধিকারিকরা। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সাহা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় পাল, ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শান্তনু মুন্সি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি (পশ্চিমবঙ্গ) প্রীতম রায়।