গুরু নানক জন্মজয়ন্তীর দিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। দেশজুড়ে প্রতিবাদের মুখে পড়ে শেষপর্যন্ত ৩টি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ঘোষণা করে মোদির আবেদন, কৃষকরা এবার ক্ষেতে ফিরে আসুন। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানান, এতে কৃষকদের জয় হল। বিরোধীদের জয় হল। হার হল বিজেপির। আর এই সিদ্ধান্ত পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের আগে বিজেপি হারানো জমি অনেকটা ফেরাবে। এমনটাই গুঞ্জন পদ্ম শিবিরের অন্দরে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিরোধীরা ভালো টক্কর দিয়েছে বিজেপিকে। পাশাপাশি গত ৭ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতায় কিছুটা খর্ব নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি। তাই কৃষি আইন আইন প্রত্যাহাররে সিদ্ধান্ত ফের উজ্জ্বল করবে মোদির ভাবমূর্তি। তাঁকে সংবেদনশীল নেতা হিসেবে তুলে ধরবে বিজেপি প্রবীণ নেতৃত্বের এমনটাই ধারণা। তাই বিরোধীদের প্রবল আক্রমণের মুখে এই সিদ্ধান্তকে মোদি সরকারের মাস্টারস্ট্রোক বলেই ধরছে তাঁরা।
এক বছর আগে যখন তিন কৃষি আইনের কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র, তারপর প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর চালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কৃষক৷ যা পরবর্তীতে বিক্ষোভের রূপ নিয়েছিল। অশান্ত হয়েছিল রাজধানী।
জুন ২০২০: তিন কৃষি আইনের প্রস্তাব কেন্দ্রের। শুরুতেই এই তিন বিলের প্রতিবাদ করে ভারতীয় কিষান মোর্চা। তাদের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করা হয়, এর ফলে ফসলের এমএসপি তথা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ব্যবস্থার অবসান হবে। তা নিয়ন্ত্রণ করবে বড় সংস্থাগুলি।
সেপ্টেম্বর ২০২০: সংসদে পেশ করা হল কৃষি বিল। লোকসভায় তা পাশ হওয়ার পরে রাজ্যসভাতেও ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায়। যাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে পাঞ্জাবের কৃষকরা। তাঁরা তিন দিনের ‘রেল রোকো’ শুরু করেন।
এদিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে মোদীর আক্ষেপ, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’’
তবে শুধু দিল্লি নয়, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও কৃষক আন্দোলন মারাত্মকরূপ নেয়। এই ইস্যুকে সঙ্গে করে বিরোধীরাও কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের বিরোধিতা শুরু করে৷ তবে শুধু জাঠ সম্প্রদায় নয়, কৃষি আইন নিয়ে বিজেপি এবং মোদি সরকারের উপর ক্ষুব্ধ শিখরাও। সেই ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আইন প্রত্যাহার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। যদিও কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লখিমপুর খেড়ির ঘটনা বিজেপির প্রতি উত্তর প্রদেশের মানুষের বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এমনটাই মনে করেন প্রবীণ বিজেপি নেতৃত্ব।