দেশের মাটি ফিরে পাওয়ার লড়াই। যুদ্ধ, আন্দোলন আর নিজেদের স্বতন্ত্রতা বাঁচিয়ে রাখার অক্লান্ত চেষ্টা। ব্রিটিশ বন্দিদশা থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির স্বপ্ন, আকাঙ্খা আর চাহিদায় দিন গুনেছিলেন প্রতিটা মানুষ। অন্যায় অত্যাচার, সহস্র প্রাণের বলিদানের শেষ দিন ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। শহিদের রক্ত বিফলে না যাওয়ার সেই ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্পর্ধায় হাজার অপমানের পর নিজের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার সেই ভারতবর্ষ আজও সমান মহিমায় উদ্ভাসিত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর সম্পূর্ণ! স্বাধীন ভারত গণতন্ত্রের, প্রজাতন্ত্রের এবং অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতায় আজও এক এবং অনন্য।
লালকেল্লায় লাহোরি গেটের উপর উত্তোলিত হয় তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। তারপর থেকে এটি প্রতীকী অনুষ্ঠান হিসেবে পালন হয় প্রতি বছর। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে দিনটি পালিত হয়। ৭৫ বছর মানে দেশের ক্ষেত্রে বেশ আনন্দের একটি বিষয় এবং তারও সঙ্গে উদযাপনের প্রস্তুতি।
তেরঙ্গা নিয়ে অনেক খুঁটিনাটিই হয়তো অজানা রয়ে গিয়েছে কিংবা স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে। চলুন আজ একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
১ . ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট প্রথমবার উড়েছিল জাতীয় পতাকা। তাও আবার এই কলকাতাতেই। পারসি বানান স্কয়্যারে উত্তোলন করা হয়েছিল সবুজ, হলুদ, লাল রঙের পতাকা।
২. তেরঙ্গার ডিজাইন করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী পিঙ্গলি বেঙ্গাইয়া।
৩. আইনে রয়েছে পতাকা তৈরি করবে একমাত্র খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ। যা হবে সুতির কিংবা রেশম কাপড়ের।
৪. নিয়ম অনুযায়ী, একমাত্র দিনের বেলাতেই উত্তোলন করা যায় ভারতীয় পতাকা। শুধু তাই নয়, যেখানে পতাকা উত্তোলন হবে তার উপরে অন্য কোনও পতাকা বা সিম্বল থাকতে পারবে না।
৫. ১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় ভারতীয় পতাকা ওড়ান পর্বতারোহী তেনজিং নোরগে।
৬. বিদেশের মাটিতে প্রথম ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভিকাজি রুস্তম কামা।
৭. কোনও অবস্থাতেই পতাকাকে মাটিতে রাখা বা ফেলা যাবে না। পতাকাকে ভাঁজ করারও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।
ইতিহাস: ব্রিটিশ রাজের ২০০ বছরের নিপীড়ন অত্যাচার, মানুষ হত্যা এমনকি নারী অত্যাচারের শেষ সীমায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ভোলার নয় একেবারেই। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের পর থেকেই দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজ শুরু হয় এবং ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ব্রিটিশ রাজের হাতে। ব্রিটিশ শাসনে দেশে ব্যাপক বিরক্তি ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়। ভারতের বুকে তখন থেকে চলেছে নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। বেশ কয়েকটি প্রতিশোধ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের দ্বারা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পথ ছিল বেশ কঠিন এবং দুর্গম। কারাবাস, মৃত্যুদণ্ড এবং ভারতজুড়ে সাহিত্য মহল, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের নিরন্তর লড়াই। দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা, স্বদেশের স্বপ্ন দেখানোর লক্ষ্যে ব্রতী হন অনেক দিগ্বিজয়ী মানুষ।লর্ড মাউনটব্যাটেনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক, ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতার আদেশ দেওয়া হলেও কাজটি ১৯৪৭ এর ১৫ অগস্ট সম্পন্ন করেন তিনি। সি রাজাগোপালচারীর স্মরণীয় কথায়, তিনি যদি অপেক্ষা করতেন, স্বাধীনতা ক্ষমতা থাকত না। স্বাধীনতার আনন্দে রক্তের দাগ পড়ে দেশভাগের কারণে। বহু মানুষের মৃত্যু, দেশান্তর, উদ্বাস্তু সমস্যা বৃদ্ধি পায় তখন।