“সদানন্দময়ী কালী মহাকালের মনমোহিনী…
তুমি আপনি নাচো,আপনি গাও মা,আপনি দাও মা করতালি।।”
শব্দের অভিশাপ নয়, আলোর রোশনাই ভরে উঠুক চারপাশ। আলোর উৎসব হোক আনন্দের। হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন আসছে কালীপুজো বা শ্যামা পূজো হিন্দু দেবী কালীর পূজা কে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি হিন্দু উৎসব। মূলত কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপুজো বিশেষ জনপ্রিয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজো অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি,অহমিয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালী পুজো করে থাকেন। এছাড়া মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তে রটন্তী কালীপূজা ও জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যা তিথিতে ফলহারিনী কালী পুজো যথেষ্ট জনপ্রিয়। আপনাদের জন্য রইল ৪ জায়গার বিখ্যাত কালীপুজোর ইতিহাস..
নবদ্বীপের আগমেশ্বরী মাতা:
আগমেশ্বরী মাতা হলেন নবদ্বীপে পূজিত কালী প্রতিমা। এই পুজো ৪০০ বছরের প্রাচীন প্রায়। কৃষ্ণানন্দ দীপান্বিতা অমাবস্যার দিনে কালী মূর্তি গড়ে রাত্রে পূজার্চনা শেষে ভোরে বিসর্জন দিতেন। বর্তমানে কোজাগরী পূর্ণিমার পর কৃষ্ণ পঞ্চমী তিথিতে প্রতিমা নির্মাণ এর কাজ শুরু হয়,অমাবস্যায় দেবী চক্ষুদান করা হয় গভীর রাতে হয় আরাধনা। পরদিন দুপুর বেলায় দেবীর নিরঞ্জন। রাত্রে পূজা-অর্চনা করে ভোরে বিসর্জন হতো বলে তখনকার লোকজন নাম দিয়েছিলেন “আগমবাগীশি কান্ত”। পরে লোকমুখে প্রচার হতে হতে নাম হয় আগমেশ্বরী মাতা। স্বামী কৃষ্ণানন্দ এখানেই পঞ্চমুন্ডির আসন এই সাধনা করে আগমসিদ্ধ হয়ে ওঠেন।
শ্যামনগর মূলাজোড় কালীবাড়ি:
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা জেলার শ্যামনগর মূলাজোড় কালীবাড়ি। এই কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ভাই গোপী নাথ ঠাকুর। কথিত আছে, গোপীনাথ এর মেয়ে ব্রহ্মময়ীর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় মাত্র আট বছর বয়সে। বিয়ের দিন পালকি করে আহিরীটোলা গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে ব্রহ্মময়ী তলিয়ে যায়। এই ঘটনার পর গোপীনাথ মুষড়ে পড়েন। এরপর গোপীনাথ স্বপ্নাদেশ পান এবং মা কালী বলেন তিনি ব্রহ্মময়ী। মুলাজোরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেটার পর ব্রহ্মময়ীর শরীর খুঁজে পান। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এখানে পূজো মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। কথিত আছে, রামপ্রসাদ যখন ভাগীরথী দিয়ে গান করতে করতে যাচ্ছিলেন তখন এখানকার দেবীর মুখ নাকি নিজের থেকেই পশ্চিম দিকে ঘুরে যায়। স্বয়ং বামাক্ষ্যাপা এসে নিজে হাতে দেবীর পূজা করতেন। মাতৃ মন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির ও।
বাঁকুড়ার ছাতনা জিড়রা গ্রামের কালীপুজো:
বাঁকুড়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম হল জিড়রা। প্রায় ৪০০ বছরের কালী পূজোতে একই নিয়ম আজও রয়ে গেছে। মৃৎশিল্পী স্বপ্নাদেশ পেলে তবেই শুরু হয় মূর্তি গড়ার কাজ। শুধু তাই নয় মূর্তির চক্ষুদানের সময় নিবেদন করা হয় পাঁঠার মাংস এই নিয়ম মেনেই কালের আরাধনায় মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ। শিকলের বাঁধন দিয়ে রাখা হয় কালিকে। এই রীতি আজও অব্যাহত। গ্রামবাসীদের কথায়, একবার নাকি পুজোর সময় নিজ দেবী মূর্তি ধারণ করে মন্দির ছেড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন দেবী। তারপর থেকে ভক্তরা ভক্তি ও স্নেহের বাঁধন এ মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন।
নৈহাটির বড়মা:
নৈহাটির বড়কালী নামে বিখ্যাত বড়মার পুজো। বর্তমানে নৈহাটিতে অনেকগুলি বড় কালীপুজো হলেও বড়মার পুজোর ঐতিহ্য অন্যরকম। কারণ এই প্রতিমার উচ্চতা হয় ২১ ফুটের। লক্ষ্মী পুজোর দিন হয় কাঠামো পুজো। নৈহাটির কালীপুজোর রীতি হল বড়মার পুজো না হলে কোনও প্রতিমারই পুজো শুরু করা হয় না। কথিত আছে, প্রায় ৯৪ বছর আগে নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখেন বিশাল বিশাল বড় বড় প্রতিমার পুজো করা হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর উনি ঠিক করেন নৈহাটিতে এরাম পুজো শুরু করবেন। ব্যস তার পর থেকে বড় মায়ের পুজো শুরু। বড়মাকে পুজোর আগের দিন জনগণের দেওয়া ২০০ কিলো রুপা আর ১০০ ভরি সোনার গয়না দিয়ে পুলিশি নিরাপত্তায় সাজানো হয়। এই পুজোর খরচের জন্য কোন চাঁদা তোলা হয় না। দেশ-বিদেশ থেকে লোকে বড় মাকে পূজা দেবার জন্য আসেন। ভক্তরা বলেন, এখানে পুজো দিলে নাকি কেউ খালি হাতে ফেরত যায় না।