গোটা বিশ্বের পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের পর থেকে পরিবর্তনের গতি আরও বেড়েছে। এমনিতেই চাকরি, ব্যবসা, অর্থ, নাম, যশ, শিক্ষা, ক্ষমতা লাভের ইঁদুড় দৌড়ের জেরে মানসিক চাপ বেড়েছে ভয়ানক। তার উপর এখন রোগ সংক্রমণের চিন্তা। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাপ, কাজ হারানো বা বেতন হ্রাসের চিন্তা, ভবিষ্যতের চিন্তা- সব মিলিয়ে সকলে বেজায় মানসিক চাপে রয়েছেন। আর এই মানসিক চাপ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে যৌন সম্পর্কে।
সম্পর্কে যৌনতা অত্যন্ত জরুরি একটা বিষয় (Physical Intimacy)। এতে সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। সঙ্গমে লিপ্ত হওয়াটা ভালবাসা (Love) প্রকাশের এক মাধ্যমও বটে। তবে অনেক সময়ই এই রোজকার ব্যস্ততায় ভালবাসা থাকলেও, তার প্রকাশ ঘটে না। অনেক সময়ই এর নেপথ্যে থাকে গুরুতর কোনও কারণ। হতে পারে তা কাজের স্ট্রেস, হতে পারে কোনও বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ। আবার অনেক সময় এর নেপথ্যে থাকতে পারে কঠিন কোনও রোগও। তাই এ ব্যাপারে অবহেলা না করাই ভাল। এই সমস্যার সমাধান একটু সচেতন থাকলেই করা যায়।
আজকাল সকলেই অতিরিক্ত মাত্রায় স্ট্রেসড। কাজের চাপ, অর্থনৈতিক চাপ তো আছেই। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার কারণে বেড়েছে মানসিক চাপও। আর এই চাপেই কিন্তু ব্যাহত হচ্ছে যৌনজীবন। সেই সঙ্গে হরমোনেরও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তৈরি হচ্ছে মানসিক এবং শারীরিক দূরত্ব। একই বাড়িতে থেকেও দুজন যেন অচেনা মানুষ। সম্পর্কে যৌনতার প্রয়োজন যে কতটা তা কম বেশি সকলেই জানেন। যৌন সঙ্গম নিয়মিত না হলে আবার মানসিক চাপ বাড়ে। গোটা বিষয়টাই যেন একটা চক্রের মতো।
স্বামী বা স্ত্রী কারও স্ট্রেসের মাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়ে পড়ে তখন তাঁর দৈনন্দিন ব্যবহারেও নানা পরিবর্তন আসতে থাকে। খিটখিটে মেজাজ, কথায় কথায় রেগে যাওয়া বা ঝগড়া করার প্রবণতা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। তার উপর তিনি যদি চাপা স্বভাবের হন তাহলে তো আরও বিপদ। অপরজনের মনে নানা সন্দেহের উদ্রেগ হয়। ফলে শারীরিক এবং মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে প্রভাবিত হয় যৌন জীবনও।
স্ট্রেসের কারণে ওজন বেড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। মোটা হতে শুরু করলে অনেকেই নিজেকে কুৎসিত ভাবতে শুরু করেন। ফলে আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকেন। আবার সঙ্গীর ওজন বৃদ্ধি পেলেও তাঁর প্রতি আকর্ষণ কম হতে থাকে। এর ফলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। যার প্রভাব পড়ে যৌন জীবনে।
চাপ কমাতে গিয়ে অনেকেই সিগারেট, অ্যালকোহলের মতো নানা বদ অভ্যাস তৈরি করে বসেন। কিন্তু সত্যি বলতে কী তাতে চাপ একেবারেই কমে না। উলটে নেশা করলে যৌন অনীহা শুরু হতে থাকে। শরীরের এনার্জি লেভেলও কমতে থাকে। শরীর দুর্বল হতে থাকে।
স্ট্রেস থেকে অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। এবং এই সমস্যা হতে পারে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে। আবার বন্ধ্যাত্বের সমস্যার কথা জানার পর অনেক দম্পতির মধ্যেই যৌন অনীহা বাড়তে থাকে।
স্ট্রেস তাড়ানোর উপায়
১) যদি দেখেন আপনার সঙ্গী দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গমের প্রতি অনীহা প্রকাশ করছে। তাহলে তা নিয়ে কখনওই অশান্তি করবেন না। বরং মন খুলে কথা বলুন। সমস্যাটা ঠিক কী, তা জানার চেষ্টা করুন। আর এই আলোচনা কখনওই ঘরবন্দি হয়ে নয়। বরং একটু নিরিবিলি জায়গায়, একান্তে আলোচনা করুন।
৩) অনেক সময় অফিসের কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত কোনও দুশ্চিন্তার কারণে সঙ্গমের প্রতি অনীহা আসতে পারে। কাজ থেকে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিয়ে কাছে-পিঠে কোথাও ঘুরে আসুন। সঙ্গীর সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান।
৪) ব্লাড প্রেসারের সমস্যা, ব্লাড সুগারের সমস্যা থাকলে অনেক সময় সঙ্গমের প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৫) এক্সারসাইজ, মেডিটেশন করলেও সুফল পাওয়া যায়। সঙ্গী এবং আপনিও নিয়মিত ব্যায়াম করা শুরু করুন। দেখবেন সুফল পাবেন। অতিরিক্ত ফাস্টফুড থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
৬) সঙ্গী ক্লান্ত থাকলে শোওয়ার ঘরটি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রোম্যান্সের পরিবেশ তৈরি করুন। সঙ্গীর মন ধীরে ধীরে ভালো হযে যাবে।
৭) সুন্দর পারফিউম বা হালকা আলোও স্ট্রেস কমিয়ে রোম্যান্টিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য দুর্দান্ত উপায়।
8) শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করে এমন খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। কার্বহাইড্রেট, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, সবুজ শাকসবজি, ফাইবার যুক্ত ফল ও সবজি খান। নিয়মিত খেতে পারেন ডার্ক চকোলেট।
৯) কড়া ব্ল্যাক কফি, তেল মশলাদার খাবার, চিনি কম খান। সিগারেট, অ্যালকোহল এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।