রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বেসরকারি সংস্থার হাতে দীর্ঘকালীন লিজে তুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা প্রথম থেকেই করছে তৃণমূল। এ বার এ নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা মোদীর সম্পত্তি নয়। দেশের সম্পত্তি। দেশ ও জনগণের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না মোদী। ‘ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন’ (National Monetisation Pipeline) নিয়ে মোদী সরকারকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) বলেন,’এটা মোদীর সম্পত্তি নয়। দেশের সম্পত্তি। দেশ ও জনগণের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না মোদী। এটা বিজেপির বিষয় নয়। দেশের ব্যাপার।আমি খুবই শকড। শুধু আমি নই, পুরো দেশ আমার সঙ্গে এই ব্যাপারে প্রতিবাদে সামিল হবে।’
কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কিছু পারে না, তারা শুধু দেশ বিক্রি করে। বন্দর বিক্রি করছে, রেল বিক্রি করছে, স্টেশন বিক্রি করছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে, বিমাও বিক্রি করছে। এদের উদ্দেশ্য সব বিক্রি করে টাকাটা রির্জাভ ভাণ্ডারে রেখে শুধু নির্বাচন করবে, আর ক্ষমতায় থাকবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশটাকে বিক্রি করছে। এই সরকারকে আমি সমর্থন করি না।’ উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা নিয়ে বিজেপি নেতারা যে সব মন্তব্য করছেন, তারও ফের তীব্র সমালোচনা করেছেন মমতা। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘বিজেপি মন্ত্রীদের কথায় বাংলা ভাগ হবে না।’
সোমবার ৬ লক্ষ কোটি টাকার ‘ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন’ চালু করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন (Nirmala Sitharaman)। এই প্রকল্পে রেল, বিমা, বিদ্যুৎ-সরবরাহ, পরিবহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রের সরকারি সম্পত্তি ভাড়া দিয়ে আয় করার পরিকল্পনা সরকারের। নির্মলা জানিয়েছিলেন, মালিকানা সরকারের হাতেই থাকবে। বিরোধীদের দাবি, এটা বিকেন্দ্রীকরণের প্রথম ধাপ।
তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। এ দিন মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাল্টা বঙ্গ-বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘মেট্রো ডেয়ারি তো রাজ্যের ছিল। রাজ্য সরকার তার কি গতি করলো? রাজ্যের সংস্থা দুর্গাপুর কেমিক্যাল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা কী? লিজ মানে তো বিক্রি নয়। আর অরুণ শৌরীকে মন্ত্রী করে যে বিলগ্নিকরণ মন্ত্রক হয়েছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে সেই সিদ্ধান্তের শরিক তো ছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমেরও মন্তব্য, ‘রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতা করছে। তারাই আবার রাজ্যের নানা সরকারি সংস্থা প্রকারান্তরে বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে।’
গতকাল রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) বলেছেন,’যে সম্পত্তিগুলির নগদীকরণ করা হচ্ছে সেগুলি তৈরি করতে ৭০ বছর লেগেছে। ভারতবাসীর কোটি কোটি টাকার করের টাকায় গড়ে উঠেছে। সেগুলি উপহার দেওয়া হচ্ছে ৩-৪ জন শিল্পপতিকে। পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন। আপনাদের ভবিষ্যৎ বেচে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।’ এ দিন তার পাল্টা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সংবাদ সংস্থা পিটিআই তাঁকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে,’উনি (রাহুল গান্ধী) কি আদৌ নগদীকরণ বোঝেন? দেশের সম্পদ বেচে দিয়েছে কংগ্রেসই।’