থাইরয়েড হল আমাদের স্বরযন্ত্রের দু’পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থি। থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ হল আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা। শরীরের জন্য এই থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরে তার নানা রকম বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম। কিন্তু কী ভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে থাইরয়েড বাসা বেঁধেছে কিনা? দেখে নেওয়া যাক থাইরয়েডের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলি
ওজনে পরিবর্তন: হঠাৎ করেই কোনও কারণ ছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়াটা হাইপোথাইরয়েডিসমের ফলে হতে পারে। খাওয়ার পরিমাণ না বাড়ানো সত্ত্বেও হঠাৎ করে ওজন পরিবর্তিত হলে থাইরয়েড হরমোনের পরীক্ষা করানো উচিত। একই ভাবে যাঁদের হঠাৎ করেই বেশ খানিকটা ওজন কমে যায়, তাঁদেরও হাইপারথাইরয়েডিসম থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: সারাক্ষণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হাইপারথাইরয়েডিসম-এর লক্ষণ হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিসম হল শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাইরয়েড হরমোন তৈরি হওয়া। সারাক্ষণ শরীরে অস্থির ভাব এবং বিশ্রামহীন বোধ করলে হাইপারথাইরয়েডিসমের সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
চুলের সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিসম হলে অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বা আধিক্য, দুটিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সময় মতো সনাক্ত করতে পারলে নির্দিষ্ট মাত্রার অসুধ খেয়ে পুরোপুরি সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই থাইরয়েড হরমোন সমস্যার কোনও লক্ষণ দেখা গেলে তা অবহেলা করে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকের উপর প্রভাব: হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে ঘাম কম হয় এবং ত্বক তার প্রয়োজনীয় আদ্রর্তা পায় না। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। হাইপোথাইরয়েডিসমের রোগীদের মধ্যে নখ ভাঙ্গার বা নখে ফাটল ধরার প্রবণতাও বেশি।
অবসন্নতা: নিয়মিত শরীর অবসন্ন লাগার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিসম। হাইপো থাইরয়েডিসম হল শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় কম থাইরয়েড হরমোন তৈরি হওয়া। সারা রাত পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও যদি সকালে অবসন্ন লাগে অথবা সারা দিন ধরে ঝিমুনি আসে তাহলে থাইরয়েড হরমোন ঠিক মতো কাজ করতে কিনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
গলার স্ফীতি: থাইরয়েড হরমোনের অভাবে অর্থাৎ হাইপোথাইরয়েডিসমের কারণে গলা ফুলে উঠতে পারে। গলায় হাত দিয়ে কোনও অস্বাভাবিক ফোলা কিছু পেলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের অভাবে গলার স্বর কিছুটা কর্কশ বা গম্ভির হয়ে যেতে পারে।