পোলো খেলা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন খেলা। খ্রিস্ট সাল গণনার প্রথম শতাব্দীতে ইরানে এই খেলাটি হতো। বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করেন যে খেলাটি খ্রিস্টপূর্ব ২ হাজার বছর আগে পারস্যবাসীরা আবিষ্কার করেন। যা হোক ইরানকেই খেলাটির আবিষ্কারক বলে গণ্য করা হয়। ইরান থেকে খেলাটি আরবে আসে। তারপর সেখান থেকে চলে যায় তিব্বতে। তিব্বতে খেলাটিকে বলা হয় ‘পুলু’। প্রকৃতপক্ষে পোলো কথাটি ‘পুলু’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হলো ‘বল’।
ভারতে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিম বিজেতাদের দ্বারা খেলাটির প্রচলন শুরু হয়। ভারত থেকে ১৮৬০ সালে খেলাটিকে নিয়ে যাওয়া হয় ইংল্যান্ডে। আজকের দিনে খেলাটি শুধু ভারতেই খেলা হয় না, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, আমেরিকা এবং পৃথিবীর অন্য দেশেও খেলাটি হয়। আধুনিককালের প্রথম পোলো ক্লাব হলো আসামের ‘কাচার ক্লাব’। ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৯ সালে।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে একটি লাঠি ও বল দিয়ে পোলো খেলা হয়। পোলো খেলার লাঠিটিকে বলে ‘ম্যালেট’। এটি খোলা মাঠের খেলা। ঘাসযুক্ত খেলার মাঠটি লম্বায় হয় ২৭৪.৩২ মিটার (৩০০ গজ) আর চওড়ায় হয় ১৪৬.৩ মিটার (১৬০ গজ) মাঠের উভয় প্রান্তে হালকা গোল পোস্ট থাকে। গোল পোস্টের খুঁটিদ্বয়ের দূরত্ব ৭.৩ মিটার (৮ গজ)। গোল পোস্টের মধ্য দিয়ে বলটি অতিক্রান্ত হলেই এক একটি গোল হয়। দুটি প্রতিযোগী দল খেলাটিতে অংশ নেয়। এক একটি দলে ৪ জন করে খেলোয়াড় থাকে। এই খেলায় ভালো খেলোয়াড় হতে গেলে ভালো ঘোড় সাওয়ার হওয়া চাই। খেলাটি ৬, ৭ অথবা ৮ রাউন্ডে হয়। খেলায় এই রাউন্ডকে বলে ‘চুক্কার’। এক একটি চুক্কারের স্থিতিকাল ৭.৫ মিনিট। প্রতিটি চুক্কারের শেষে খেলোয়াড়দের সামান্য বিশ্রাম নিতে দেয়া হয়। খেলাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই কেবলমাত্র ধনী লোকই এটি খেলতে পারে। আর এ জন্যই খেলাটিকে রাজপুত্রদের খেলাও বলা হয়।
হাতির পিঠে চড়ে প্রথম পোলো খেলা হয় ১৯৭৬ সালে ভারতের জয়পুরে। ৪০ হাজার দর্শক এই খেলাটি উপভোগ করেছিল। ১৯৭৮ সালে উটের পিঠে চড়ে প্রথম খেলাটিও হয়েছিল জয়পুরে। লোকে এখন সাইকেল-পোলোও খেলতে শুরু করেছে।
পৃথিবীতে পোলো খেলার সব থেকে বড় আয়োজনের নাম ‘ব্যাঙ্গালোর লিমিটেড হ্যান্ডিকাপ পোলো টুর্নামেন্ট ট্রাফি’। এই খেলায় পুরস্কারের কাপটির উচ্চতা ৬ ফুট।
ক্যালকাটা পোলো ক্লাব প্রাচীনতম পোলো ট্রফি এজরা কাপ (১৮৮০) চালু করার গৌরবের অধিকারী। পাশাপাশি এই ক্লাব কারমাইকেল কাপ (১৯১০) ও স্টিউয়ার্ট কাপও চালু করেছিল।প্রথম দিকে ভারতের বিভিন্ন রাজবংশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ আয়োজিত হত।
দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন পোলোর জন্য বিখ্যাত। লাহোরে এই খেলা খেলতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছিল তার। হাওড়া জেলার ধুলাগড়ের কাছে দেউলপুর গ্রামে এক সময় পোলো খেলার বল তৈরি হত। তবে অত্যাধুনিক বল বাজারে চলে আসার ফলে এই শিল্পে এখন ভাটার টান।
ব্রুনেইয়ের সু হাসানল বলকিয়াহ। ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত হয় ব্রুনেই। বলকিয়াহ পোলো খেলার অন্ধ ভক্ত। জানা যায় পোলো খেলা সুলতানের নেশা। তাই ২২০টি পোলো ঘোড়ার জন্য একাধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আস্তাবলও রয়েছে প্রাসাদে।