33 C
Kolkata
33 C
Kolkata
বৃহস্পতিবার, মার্চ 30, 2023

মন্দিরময় আঁটপুর, ইতিহাস যেখানে কথা বলে

 

 

অর্পিতা লাহিড়ীঃ হুগলী জেলার তারকেশ্বর এর নাম শৈব তীর্থ হিসেবে সর্বজনবিদিত। কিন্তু এই পথেই যেতে গিয়ে হরিপাল স্টেশন থেকে রাস্তা ভাগ হয়ে গিয়ে বাম দিক ধরলেই পৌঁছে যাওয়া যায় এক প্রাচীন জনপদে। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র এবং জাঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই আঁটপুর।

কথিত আছে আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগে মিত্র বংশের হাত ধরে শুরু হয় এই স্থানের উন্নতি। কৃষ্ণরাম মিত্র ছিলেন সেই সময়ে বর্ধমান রাজার দেওয়ান। নিজ বুদ্ধিবলে অর্থ উপার্জন করেছিলেন প্রচুর। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন শাক্ত ধর্মীয়। কিন্তু এক সন্ন্যাসী তাঁকে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি দিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেন। সেই আদেশ মেনেই তিনি তৈরী করেন টেরাকোটার কাজ করা দোচালা মন্দির যা সারা বাংলা য় দ্বিতীয় বৃহত্তম টেরাকোটার মন্দির। প্রথমটি অবশ্যই বিষ্ণুপুরের।

 

এককথায় মন্দির নগরী আঁটপুর। হুগলী জেলার শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র এবং জাঙ্গীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই আঁটপুর। স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরুভাইদের স্মৃতিবিজরিত গ্রাম আঁটপুর৷ ১৭০৮ সালে তৈরী মিত্রদের রাধাগোবিন্দের আটচালা শৈলীর মন্দিরটি টেরাকোটার কাজ অতুলনীয়৷ বাংলার প্রাচীন কাঠ খোদাইয়ের অন্যতম নিদর্শন মেলে কাছের চন্ডীমন্ডপে৷

 

স্বামীজীর গুরুভাই স্বামী প্রেমানন্দের জন্মস্থান আঁটপুর৷ পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল বাবুরাম ঘোষ।১৮৮৬ সালের ২৪শে ডিসেম্বর, যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিনের আগের সন্ধ্যায়, তরুণ নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে বাবুরাম, নিরঞ্জন, তারকনাথ, শরৎ, শশী, গঙ্গাধর, কালী ও সারদাপ্রসন্ন নয়জন তরুণ ধুনি জ্বেলে আত্মিক মুক্তি ও জগতের হিতের ব্রত নেন। এরপরেই যোগ দিলেন রাখাল, হরি, যোগেন, লাটু, বুড়ো গোপাল, খোকা ও হরিপ্রসন্ন।

 

এই ধুনি মন্ডপের পিছনেই রয়েছে স্বামী প্রেমানন্দের বসতভিটা। যেখানে দুবার এসে অবস্থান করেন শ্রীশ্রী সারদা মা। দোতলাতেই একটি ঘরে বাস করতেন স্বামীজি।ঠাকুরের এই ষোড়শ সন্ন্যাসী সন্তানেরা পরবর্তী সময়ে পরিচিত হয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রেমানন্দ, স্বামী নিরঞ্জনানন্দ, স্বামী শিবানন্দ , স্বামী সারদানন্দ, স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ, স্বামী অখণ্ডানন্দ, স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ , স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দ, স্বামী যোগানন্দ, স্বামী অদ্বৈতানন্দ, স্বামী অদ্ভুতানন্দ, স্বামী সুবোধানন্দ ও স্বামী বিজ্ঞানানন্দ নামে।

আঁটপুরে অবশ্যই দেখবেন শ্যামের পাট। মহাপ্রভুর শ্রীচৈতন্যদেব এর পার্ষদ পরমেশ্বরী দাসের জন্মভিটা। এখানে মদন মোহন বিগ্রহ ও সেই সঙ্গে মহাপ্রভুর পদচিহ্ন রাখা আছে। আর আছে শতাধিক প্রাচীন এক বুকুল গাছ।

একদিনের ছুটিতে কাটিয়ে যেতে পারেন আঁটপুরে। তবে আঁটপুরে পা রেখে আগেই শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে ভোগখাওয়ার কুপনটি করে নেবেন বিনিময় মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।

কি করে যাবেন।

পূর্ব রেলের হরিপাল স্টেশনে নেমে অটো, ট্রেকার, ম্যাজিক গাড়ি পাবেন

হাওড়া থেকে বাসে জাঙ্গিপাড়া এসে সেখান থেকেও টোটো মিলবে। তবে এক্ষেত্রে দরদাম করে নিলে টোটোচালক গাইডের কাজটাও করে দেন। সেই টোটোতেই সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে নিতে পারবেন।

এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়িতেও কলকাতা থেকে মাত্র ২ ঘন্টার ড্রাইভে পৌঁছে যেতে পারেন আঁটপুর।

 

 

 

- Advertisement -spot_img

Latest news

- Advertisement -spot_img

Related news

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.