পাচার কাহিনী ১
পুষ্প বিবাহিত।কোনরকমে সংসার চলে তাদের ।স্বামী অসুস্থ। সংসারের হাল ধরতে তাকেও কাজে নামতে হয় ।একদিন কাজে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি পুষ্প। সবাই এটাই ধরে নিয়েছে যে কাউকে ভালোবেসে সংসার পেতেছে নিশ্চয়ই । মাস দুয়েক পর একদিন হঠাৎই পুষ্পর ফোন পেয়ে তার বাবা সহদেব হতভম্ব হয়ে যান। সহদেব ছোটেন থানায় ।যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেই নম্বরে পুলিশ ফোন করে । অপরপ্রান্তে এক ভদ্রলোক হিন্দিতে উত্তর দেয় এবং যা বলে তা শুনে পুলিশও হতভম্ব হয়ে যায় ।
দিন আনি দিন খাই সংসারে বাচ্চার খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় পুষ্প ও তার স্বামীকে । তাই পুষ্প ঠিক করে সেও কাজ করবে। সেইমতো পুষ্প ও তার স্বামী কাজে বেরিয়ে যেত বাচ্চাকে বাপের বাড়িতে রেখে। পুষ্প ট্রেনে করে পার্ক সার্কাসে একটি গেঞ্জির কারখানায় কাজ করতে আসত । সন্ধ্যেবেলায় ট্রেনে বাড়ি ফিরতো। প্রতিদিন যাতায়াতের পথে পরিচয় হয় রাজকুমারের সঙ্গে। কথায় কথায় পুষ্প রাজকুমারকে তার সংসারের পরিস্থিতি সবটা জানায়।রাজকুমার বলে সে বহু মহিলাকে কাজ দিয়েছে। এমনকি রাজ্যের বাইরে তো বটেই, বিদেশেও মেয়েদের কাজের ব্যবস্থা করে দেয় রাজকুমার। বিনিময়ে এক মাসের দালালি নেয় রাজকুমার ।রাজকুমারের হাবভাব দেখে পুষ্পর বিশ্বাস হয়। ভাবে সেও যদি এরকম বাইরে কাজ করতে যায় তাহলে এক মাসের মাইনে দিতে কোন অসুবিধা হবে না। সেইমতো স্বামীর সাথে আলোচনা করে পুষ্প জানায় রাজকুমারকে। রাজকুমার আশ্বস্ত করে এবং বলে খুব শীঘ্রই কাজ পাবে পুষ্প। আর এটাও বলে যেহেতু পুষ্পর টানাটানির সংসার সেহেতু এক মাসের টাকা একবারে না দিয়ে মাইনের থেকে হাফ হাফ করে তাকে দিলেও হবে ।পুষ্প উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে। সংসারে সুখ আসার আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকে।
দিনকয়েকের মধ্যে রাজকুমার একদিন হঠাৎ জানায় একটা কাজ পেয়েছে। মোটা মাইনে সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, মাসে একবার ছুটি, দিন তিনেকের জন্য। তবে আজই কথা বলতে যেতে হবে।না হলে অন্য কেউ সেই কাজে ঢুকে যেতে পারে। তাহলে কাজটা হাতছাড়া হয়ে যাবে । পুষ্প রাজি হয়।
পুষ্পর যখন হুঁশ আসে তখন দেখে ঘরে কয়েকটি মেয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। তাদের কাছ থেকে জানতে পারে এটা পুুুণে শহর, আর তারাও কোনো না কোনো ফাঁদে পড়ে বিক্রি হয়ে এখানে এসেছে । পুষ্পর বুঝতে বাকি থাকে না তার সাথেও ঠিক এটাই হয়েছে। মনে পড়ে ওরা চায়ের দোকাানে ঢুকে চা বিস্কুট খেয়েছিল। তারপর সব আব্ছা ।এরপর শুরু হয় তাদের উপর ভয়ানক অত্যাচার। দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয় পুষ্প এবং এরকমই আরো অনেক হতভাগ্য মেয়েদের।মারের ভয়ে রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না তাদের। ব্যবহারের পর স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার গুমটি ঘরে পশুর মত ঠাসাঠাসি করে রাখা হতো পাচার হয়ে আসা অসহায় মেয়েদের। একটা সময় পুষ্প ভেবে নিয়েছিল তার আর মুক্তি নেই ।
এভাবেই কেটে যায় মাস দুয়েক ।একদিন হঠাৎ পুষ্পর ঘরে আসে বাঙালি কাস্টমার সমীর। পুষ্প খুশি হয়ে যায় তার বাংলা কথা শুনে। সমীরের সঙ্গে পুষ্পর বন্ধুত্ব হয়ে যায় ।প্রতিদিন আসতে থাকে সে পুষ্পর ঘরে ।পুষ্প তাকে সব মনের কষ্ট জানায়।সমীর পুষ্পকে সবরকম সাহায্য করবে জানায়। সেইমতো আশ্বাস পেয়ে পুষ্প সমীরের ফোন থেকে বাবার সঙ্গে কথা বলে ,কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে । স্বামী ও সন্তানের কথা জানতে চায় পুষ্প। এদিকে পুষ্পর বাবা মেয়ের ফোন পেয়ে দিশেহারা হয়ে থানায় যোগাযোগ করে ।
পুলিশ সেই নম্বরের সুত্র ধরে পুষ্পর ঠিকানা খুঁজে বের করে ।এক মহিলা পুলিশকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশ পৌঁছে যায় সেই ঠিকানায়।লোকাল থানার পুলিশ এর সাহায্যে অবশেষে পুনের পতিতাপল্লী থেকে উদ্ধার হয় পুষ্প সহ আরো বেশ কয়েকজন অসহায় মেয়ে।
এরকম ফাঁদে পা দিয়ে হামেশাই পাচার হয়ে চলেছে এমন অনেক পুষ্প। তাই সাবধান। এরকম কোন প্রলোভনে পা দেবেন না।অচেনা কাউকে বিশ্বাস করবেন না। নাহলে আপনার সাথেও ঘটে যেতে পারে এমনই ভয়ঙ্কর ঘটনা ।