ইয়াসের (Cyclone yass) পর মৃত্যু হল এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাঘের (Tiger) । ২৫ মে, বুধবার সুন্দরবন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার পরই জঙ্গল, নদী থেকে লোকালয় চলে আসে বেশ কয়েকটি হরিণ, কুমির। সাপেরও উৎপাত শুরু হয়। কিন্তু বাঘের দেখা সেভাবে মেলেনি। তিনদিন পর অবশেষে রবিবার সকালে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের হরিখালি ক্যাম্পের পুকুর পাড়ে অসুস্থ অবস্থায় একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বনকর্মীরা তড়িঘড়ি বাঘটির শুশ্রুষা শুরু করলেও বাঁচানো যায় না। সজনেখালি ক্যাম্পে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ১১-১২ বছরের পূর্ণবয়স্ক এই পুরুষ বাঘটির।
জানা গিয়েছে, এদিন পুকুরের পাশে বাঘটিকে অসুস্থ অবস্থায় হরিখালি ক্যাম্পের পুকুর পাড়ে শুয়ে থাকতে দেখেন বনকর্মীরা । ঘটনাটি বনকর্মীদের নজরেই পড়ে। বাঘটিকে দেখেই ভীষণ অসুস্থ বলে মনে হয় বনকর্মীদের। তারা বাঘটিকে খাওয়ার জন্য কাঁচা মাংস, জল দেয়। কিন্তু বাঘটি কিচ্ছু খায়নি। এরপর বনকর্মীরা চিকিৎসকদের খবর দেয় ৷ চিকিৎসকরা এসে বাঘটিকে স্যালাইন দেওয়ার চেষ্টাও করেন। এর পর বাঘটিকে সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে সেখানে পৌঁছানোর আগে পথেই মৃত্যু হয় বাঘটির।
বাঘটির মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার তদন্তে বাঘটির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে বনাধিকারিকরা জানিয়েছেন।
প্রাথমিক অনুমান, ইয়াস এবং ভরা কটালের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাঘটি। তবে বাঘটির মৃত্যুর আসল কারণ জানতে ময়না তদন্ত করা হবে। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ইয়াসের কারণে জঙ্গলের ভেতর জল ঢুকে গিয়েছিল। সে কারণে ওই দিন হরিণ ও বুনো শুয়োরের জলে ভেসে লোকালয়ের দিকে চলে এসেছিল৷
প্রসঙ্গত, ভারতের সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি জাতীয় উদ্যান, ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। বৃহত্তর সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখণ্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ
জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী।